চার ইঞ্চি র দশভূজার মূর্তি ঘিরে পুজো আয়োজন নবস্থায়

22nd October 2020 5:01 pm বর্ধমান
চার ইঞ্চি র দশভূজার মূর্তি ঘিরে পুজো আয়োজন নবস্থায়


প্রদীপ চট্টোপাধ‍্যায় ( বর্ধমান ) :  অষ্টধাতুর তৈরি  মাত্র চার ইঞ্চি উচ্চতার দেবী দশভূজার মূর্তি । সেই মূর্তির পুজো ঘিরেই দুর্গোৎসবের কটা দিন মাতোয়ারা থাকেন পূর্ব বর্ধমানের মেমারির নবস্থা গ্রামের বাসিন্দারা ।বিগত পাঁচশো বছরেরও বেশী সময়কাল ধরে নবস্থা গ্রামের  দক্ষিন পাড়ার বিশ্বাস পরিবার চার ইঞ্চির অষ্টধাতুর দেবী  উমার মূ্র্তি পুজো করে আসছেন। নিজ মাহাত্ম গুনেই এলাকাবাসীর কাছে আরাধ্য দেবী হিসাবে মান্যতা পেয়ে আসছে চার ইঞ্চির এই দশভূজা।  শহর,মফস্বলের বড় বাজেটের থিম ভাবনার পুজো দেখা নিয়ে কোন  মাতামাতি নেই নবস্থা গ্রামের বাসিন্দাদের । তারা এখন ব্যস্ত ছোট দুর্গার পুজোর আয়োজনের শেষ মুহুর্তের প্রস্তিতি সেরে ফেলতে । তাই পুরোদমে শুরু হয়েগেছে  বিশ্বাস বাড়ির নাট মন্দির সাজিয়ে তোলার কাজ । নবস্থা  গ্রামের বাসিন্দারা মনেকরেন নিষ্ঠা ও ভক্তির মেলবন্ধনে হওয়া তাঁদের ছোট্ট দুর্গা মায়ের  পুজো থিমের বড় বাজেটের পুজোর থেকেও বেশী নজরকাড়া ।  নবস্থা গ্রামের রাজারাম বিশ্বাসের বাড়ি লাগোয়া মন্দিরে সারা বছর অধিষ্ঠিত থাকেন  চার ইঞ্চির দেবী দুর্গা । পঞ্জিকার নির্ঘন্ট মেনে কোন নির্দিষ্ট দিন বা সময় ধরে নয় ।সারা  বছরই নিত্যসেবা হয় অষ্টধাতুর এই  দুর্গা মূর্তির । নিত্যসেবা সারেন স্থানীয় সালিগ্রাম নিবাসী পুজারী কার্তীক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিবার সদস্যরা ।মহাসপ্তমির দিন সকালে বিশ্বাস বাড়ির মন্দির থেকে অষ্টধাতুর দশভূজার মূর্তি  নিয়ে যাওয়া হয় পরিবারের বড় নাটমন্দিরে । দেবী পক্ষের চারটে দিন নাট মন্দিরেই নিষ্ঠা সহকারে অষ্টধাতুর ছোট্ট দুর্গা মায়ের পুজো হয় ।বিশ্বাস পরিবারের কোন পুরুষ এই ছোট্ট অষ্টধাতুর দশভূজা মূর্তির পুজোর সূচনা  করেছিলেন তা জানতে পারেননি বর্তমান পরিবার সদস্যরা ।  বিশ্বাস পরিবারের বর্তমান প্রবীন সদস্য রাজারাম বিশ্বাস জানান , পাঁচশো বছরেরও বেশী সময়কাল ধরে তাঁদের বংশের সদস্যরা 
ছোট্ট দশভূজা মায়ের পুজোপাঠ করে আসছেন। বর্তমানে বংশের সপ্তম পুরুষরা পুজোর আয়োজন করছেন। পুজোর চারটে দিন লোকাচার মেনেই পুজো হয় । পারিবারিক প্রথা মেনে অষ্টমির সন্ধিপুজোর দিন ছাগ  বলিদান ,নবমির দিন ছাঁচি কুমড়ো ও কলা বলিদেবার প্রথা এখনও চালু রয়েছে । দশভূজা দেবী মায়ের নানা মাহাত্মের কথা জানিয়েছেন রাজারাম বাবু ।তিনি  বলেন ,ইতিপূর্বে একাধীকবার  তাঁদের পরিবারের অষ্টধাতুর দশভূজার মূর্তিটি চুরি হয়ে গেলেও কোন না কোন ভাবে মূর্তিটি ফের বিশ্বাস বাড়িতে ফিরে এসেছে । ২০০৭ সালে মূর্তিটি চুরি  হয়ে যায়।  তা নিয়ে গ্রামে হুলস্থুল পড়ে যায় । ওই সময়কালে এলাকার একটি খালে জেলেরা যখন মাছ ধরছিল তখন তাঁদের জালে দেবী মূর্তিটি উঠে অসে । পুলিশ মূর্তিটি নিজেদের হেপাজতে নেয় । পরে মেমারি ও বর্ধমান থানা  ঘুরে অষ্টধাতুর দশভূজা মায়ের মূর্তি ফের মন্দিরে ফিরিয়ে আনা হয় । পরিবারের অন্য সদস্যরা বলেন,তাঁদের পূর্বপুরুষরা একদা মেমারির বসতপুর এলাকায় বসবাস করতেন । ওই  সময়ে এক পূর্ব পুরুষের কাঁধে বাজপাখি উড়ে এসে বসে । তার পরেই ওই পূর্ব পুরুষ স্বপ্নাদেশ পান । সেই স্বপ্নাদেশ মেনে অষ্টধাতুর  
চার ইঞ্চির দেবী  দশভূজা মায়ের মূর্তি গড়ে পরিবারে শুরু হয় পুজোপাঠ ।  পূজারী কার্তিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিবার সদস্যরা বলেন, ছোট্ট দশভূজা মাকে নিয়ে এলাকাবাসীর শ্রদ্ধা ও ভক্তি ভাবের অন্ত নেই । এই ছোট্ট দশভূজা মায়ের পুজোই নবস্থা এলাকার সবচেয়ে প্রাচীন দুর্গা পুজো । ঐতিহ্য পরম্পরা মেনে  নবমির দিন ১০৮ টি পদ্ম ফুলের মালা দেবী মাকে পরানো হয় । দেবী মায়ের বিধান মেনে বিজয়ার দিন এলাকার সকলে এখনও অপরাজিতা ফুলের তাগা ধারণ করেন । দশমির পুজো শেষ হলে  দশভূজার মূর্তি নাট মন্দির থেকে বাড়ি লাগোয়া  মন্দিরে নিয়ে যাওয়া হয় । পুরোহিত বলেন  বিশ্বাস বাড়ির পুজোয় দশমির দিন সিঁদুর খেলার কোন  চল নেই । 





Others News

MEMARI . একবছর আগে আবেদন করেও মেলেনি জাতিগত শংসাপত্র : হন‍্যে হয়ে ঘুরছেন মা

MEMARI . একবছর আগে আবেদন করেও মেলেনি জাতিগত শংসাপত্র : হন‍্যে হয়ে ঘুরছেন মা


প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় ( বর্ধমান ) : প্রায় এক বছর আগে আবেদন করেও মেয়ের জাতিগত শংসাপত্র মেলেনি । আবেদনকারীদের জাতি শংসাপত্র দেওয়ার
ক্ষেত্রে দেরি করা যাবেনা বলে জানিয়ে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।কিন্তু বাস্তবে ঠিক তার উল্টোটাই ঘটে চলেছে।প্রায় এক বছর আগে  চতুর্থ শ্রেণীতে পাঠরত মেয়ের ওবিসি শংসাপত্র পাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে  আবেদন করেছিলেন মা।কিন্তু মেয়ে কে পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তির সময় এগিয়ে আসলেও জাতি  শংসাপত্র আজও না মেলায় কার্যত হতাশ হয়ে পড়েছেন পূর্ব বর্ধমানের মেমারির রাধাকান্তপুর নিবাসী ঊর্মিলা দাস।ওবিসি শংসাপত্র পাবার জন্য ঊর্মিলাদেবী বৃহস্পতি বার মেমারি ১ ব্লক বিডিও অফিসে লিখিত ভাবে আবেদন জানিয়েছেন। শংসাপত্র পাবার জন্য বিডিও সাহেব কি ব্যবস্থা করেন সেদিকেই এখন তাকিয়ে ঊর্মিলাদেবী। 

বিডিওকে লিখিত আবেদনে ঊর্মিলাদেবী জানিয়েছেন ,তাঁর স্বামী মানিক দাস দৃষ্টিহীন প্রতিবন্ধী ।বছর ১০ বয়সী তাঁদের একমাত্র কন্যা গ্রামের বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণীতে পাঠরত কালে তাঁর ওবিসি শংসাপত্র পাবার জন্য তিনি নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারী আবেদন করেছিলেন।  উর্মিলাদেবী বলেন ,তার পর থেকে দীর্ঘ সময় পেরিয়ে  গেলেও তিনি তাঁর মেয়ের ওবিসি শংসাপত্র পান না।মেয়ের পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তির সময় এগিয়ে আসায় গত অক্টোবর মাসের শেষের দিকে তিনি শংসাপত্রের বিষয়ে মেমারি ১ ব্লকের বিডিও অফিসে খোঁজ নিতে যান।জাতি শংসাপত্র বিষয়ের বায়িত্বে থাকা বিডিও অফিসের আধিকারিক তাঁকে অনলাইনে এই সংক্রান্ত একটি নথি বের করে আনতে বলেন । অনলাইনে সেই নথি বের করেনিয়ে তিনি ফের ওই আধিকারিকের কাছে যান । তা দেখার পর ওই আধিকারিক তাঁকে  ২০ দিন বাদে আসতে বলেন । ঊর্মিলাদেবী বলেন , তিনি ২৫ দিন বাদে যাবার পর ওই আধিকারিক তাঁকে গোপগন্তার ২ গ্রাম পঞ্চায়েতে গিয়ে খোঁজ নেবার কথা বলেন । তিনি এরপর গ্রামপঞ্চায়েত অফিসে খোঁজ নিতে যান । নথি ঘেঁটে পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেয় তাঁর মেয়ের নামে কোন ওবিসি শংসাপত্র পঞ্চায়েতে আসে নি।ঊর্মিলাদেবী দাবী করেন ,এই ভাবে তিনি একবার বিডিও অফিস , আবার পঞ্চায়েত অফিসে দরবার করে চলেন । কিন্তু তাতে কাজের কাজ কিছু হয় না। মেয়ের ওবিসি শংসাপত্র পাবার জন্য  গত ১৩ ডিসেম্বর ফের তিনি বিডিও অফিসে যান ।ওই দিনও বিডিও অফিসের জাতি শংসাপত্র বিষয়ক বিভাগের আধিকারিক তাঁকে একই ভাবে পঞ্চায়েত অফিসে খোঁজ নিতে যেতে বলে দায় সারেন। পরদিন তিনি পঞ্চায়েত অফিসে খোঁজ নিতে গেলে পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ ফের জানিয়ে দেয় তাঁর মেয়ের নামে  ওবিসি শংসাপত্র পঞ্চায়েতে আসে নি । কেন মেয়ের জাতি শংসাপত্র পাচ্ছেন না সেই বিষয়ে  না পঞ্চায়েত না ব্লক প্রশাসনের কর্তৃপক্ষ কেউই তাঁকে কিছু জানাতে পারেন । ঊর্মিলাদেবী বলেন ,পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তির আগে তার মেয়ে যাতে ওবিসি শংসাপত্র পেয়ে যায় তার ব্যবস্থা করার জন্য এদিন তিনি বিডিওর কাছে লিখিত ভাবে আবেদন জানিয়েছেন । মেমারী ১ ব্লকের বিডিও আলী মহম্মদ ওলি উল্লাহ এদিন বলেন ,“জাতি শংসাপত্র পাবার জন্য হাজার হাজার আবেদন জমা পড়ছে । তবে ঊর্মিলাদেবীর কন্যা দ্রুত যাতে বিবিসি শংসাপত্র দ্রুথ পান সেই বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে “। মেমারির বিধায়ক মধুসূদন ভট্টাচার্য্য বলেন,’মেমারি  বিধানসভা এলাকার আবেদনকারীরা দ্রুত যাতে জাতি শংসাপত্র পান সেই বিষয়ে প্রশাসনকে আরও তৎপর হওয়ার কথা বলবো’।